Tuesday, March 12, 2013

নিজকে চিনতে শেখা

আমি মিথ্যা বলতে পারিনা তাই সত্যি সত্যি বলছি । আজকের এই দিনেই আমি স্রষ্টার সৃষ্ট জগতের সবচেয়ে জটিল ও বিস্ময়কর জায়গা এই পৃথিবীতে আগমন করেছিলাম। সময়টা ছিল ১৯ শতকের শুরুর দিকে, দিনক্ষন ১২ই মার্চ । পৃথিবীর টানেই হয়ত এই ধরাতে আসতে হয়েছে । পৃথিবী আমাকে চেয়েছিলো না আমি তাকে চেয়েছি এ হিসাব দিতে পারবো জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে । তবে যাই হোক পৃথিবীতে এসে কিন্তু যথেষ্ট লাভই হয়েছে আমার । সবাই সাদরামন্ত্রন জানিয়েছিলো । আব্বু আম্মুর প্রথম সন্তান অর্থাত্‍ আমার বড় ভাই অকষ্মাত্‍ এ ধরা ত্যাগ করার বিরহে আমার শুভাগমণের জন্য তারা কিন্তু যথেষ্ট উদগ্রীব ছিল বটে । এত উদগ্রীবতা আকাঙ্খা ও আমন্ত্রনের মাঝে শেষমেষ আমার আগমন ঘটেছিলো ।

জানিনা কোন কারণে এখনকার মত রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে প্রজন্ম চত্ত্বর কিংবা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মোড়ের মত এ দেশ রেগে ফুসে উঠেছিলো কিনা কিন্তু প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের পানিতে চট্টগ্রাম যে ফুলে ফেঁপে গিয়েছিলো তা কিন্তু সকলেরই জানা । এভাবে পানির মাঝে বেড়ে ওঠার কারণেই হয়তো তার সাথে সখ্যতা একটু ভালোই জমে গিয়েছিলো আর তাই হয়তো যখন তখন আমার চোখের আশেপাশে পানির সহোবস্হান লক্ষ করা যায় ।।।।।।

যাইহোক, দীর্ঘ ৮ মাস ১২ দিন মুক্তি সংগ্রামের পর যথারীতি মায়ের কোলজুড়ে আগমন ঘটলো আমার এ পৃথিবীতে । তখন আমি হাসছিলাম না কাঁদছিলাম সঠিক খেয়াল নেই কিন্তু আম্মু আমার ঠিকই কাঁদছিলো ।

পরে বলে উঠলো ছেলে নাকি থাকতেই চাচ্ছেনা পেটে, মাকে দেখার প্রবলাকুতি বিভিন্নভাবে সে বারবার প্রকাশ করছে কিন্তু পরম করুণাময়ের অনুমতি বিনে যেখানে একটি গাছের পাতাও নড়েনা সেখানে এমন সুন্দরো এক নরের কিভাবে আগমন ঘটতে পারে....!!!!

তা সে যতই আসতে চাউক না কেন.......?????
কিন্তু শেষমেষ আমারই জয় হলো, আম্মুকে দেখার প্রবলাগ্রহ মহান করুণাময়ের অধিকতর পছন্দ হলো এবং বলাবাহুল্য পাশাপাশি তা আমার আম্মুর ও হৃদয় ও ছুয়ে গেলো । আব্বু তো আমাকে দেখে খুউব খুশি হলেন আর মনে মনে বললেন এমন ফুটফুটে রাজপুত্রের ন্যায় ছেলে আমার ঘরে..???


শুকরিয়াদায় করে বললেন বেশ ভালো বেশ ভালো ।।।।।






আব্বু ছিলেন তত্‍কালীন বেসরকারী পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবের সাহিত্য ইনচার্জ ও ধর্ম দর্শন বিভাগের মূল সম্পাদক এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে খন্ডকালীন চাকুরীজীবি ছিলেন । সারাদিন অফিসে লেখালেখি, বিভিন্ন শুধীজনের বইয়ের প্রুফ দেখে দেয়া , অনুবাদ করা , বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে কলাম লেখা এবং বাসায় এসেও ঐ একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটানোই ছিলো আব্বুর একমাত্র কাজ । এমনই এক লিখি লিখি , পড়ি পড়ি পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা ।

এখনো আমার সুস্পষ্ট মনে আছে তখন আমাদের বাসায় ৫টি দৈনিক পত্রিকা সৌজন্য সংখ্যা আসত--
ইনকিলাব , বাংলাবাজার পত্রিকা , জনকন্ঠ , দিনকাল ও মানবজমিন । প্রতিদিন ঐ ৫টি পত্রিকার সমস্ত রঙ্গিন পৃষ্টাগুলো এবং ছোটদের পাতা পড়ার পরই আমার মনে তাল পাখার হাওয়া বইতো !!!!
তত্‍কালীন সময়ে ঢাকা পূর্ব রামপুরায় মাসুদ ম্যানসনে ৪০০০ টাকা মূল্যের এক বিরাট ফ্ল্যাটে থাকতাম স্বপরিবারে । ফ্ল্যাটের সমস্ত রূমেই শুধু বই আর বই আর পত্রিকা । পৃথিবীতে যদি আমার কোনো পরিচিত গন্ধ থেকে থাকে তবে তা হলো এই বই । কেমন জানি এক ভ্যাপসা টাইপের গন্ধ ছেয়ে গিয়েছিলো পুরো ফ্ল্যাটটাতে । আর ভাল লাগে না এই ঘরে , সারাক্ষন দৌড়াদৌড়ি আর ছুটোছুটি চলতো পাশের ফ্ল্যাট আর আমাদের ফ্ল্যাট এর মাঝে । আমার আম্মুর সুখ দুঃখের বন্ধু ছিলেন ঐ পাশের ফ্ল্যাটের একটাই আন্টি যদিও তিনি হিন্দু ছিলেন । ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৪ ঘন্টা তো আমার ঘরে তো ১০ ঘন্টা উনার ঘরে । উনার দুই মেয়ে ও এক ছেলে ছিল ।

ত্রপা দত্ত, কেয়া দত্ত ও কিষাণ দত্ত । সারাক্ষন শুধু দুষ্টুমি আর দুষ্টুমি ।প্রচন্ড মিস করি সব্বাইকে । ছোট থেকেই এমন এক পরিবারের সাথে থাকার কারণেই হয়তো অসাম্প্রদায়িকতার শুভ্র বীজ আমার মাথায় ভালভাবেই বপন হয়েছিলো ।

(তবে এখন বইলেন না যেন মাথায় আবার কিতা কইরা বীজ বপন হয়, বীজ যে শুধু ক্ষেতেই বোনা যায়....!!!!)

আর এই জন্যেই হয়তো কাজী নজরুল ইসলামের মতো---

গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!

কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কন্‌ফুসিয়াস্‌? চার্বাক চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!
বন্ধু, যা-খুশি হও,
পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, যত সখ-
কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।
কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!


এভাবে বলতে ভালই লাগে কিংবা লালন ব্যান্ডের মুখে মুখে---


যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান,
জাতিগোত্র নাহি রবে,
মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে, এমন মানব সমাজ ।।।



গাইতেও আর দ্বিধাবোধ হয়না বরং স্বাচ্ছন্নবোধ করি এই ভেবে যে আমি ভাবে নয়, সত্যিকার অর্থে একজন অসাম্প্রদায়িক নাগরিক ।






আমার জন্মলগ্নে আব্বুর যতটাসম্ভব এমনকি সামান্য হলেও ডায়াবেটিস ছিল আর তাই জন্য বোধহয় এখন, আমাদের মুকিত ভাইয়ের ডায়ালগটা........


চিঃ চিঃ চিঃ চিঃ চিঃ
বাহ ভালো তো, চায়ের দামে শরবত পাইলাম ভালো না..!!!

এমন চিনি বিরোধী স্লোগান প্রায়ই আমার মুখে শোনা যায় ।







আগেই বলেছিলাম, মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমেই আমার এ ধরাতে আগমন ঘটেছিলো সুতরাং শুরুটা যেহেতু এমন ছিলো ফলে খুব সহজেই আমার প্রতিটি পদক্ষেপেই, প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটু একটু স্বাধীনচেতা ভাব লক্ষ্য করা যায় । প্রতিটি নতুন দিনের সূর্যের উপস্থিতি যখন আমরা টের পাই তখন থাকি বিছানায় কাজেই এখান থেকে শুরু করে নাস্তার ময়দানে, চার চাকার গাড়িতে, বড় হওয়ার কারখানায়, আড্ডায় এবং সর্বস্থলে তা ডাঙায় হোক আর চূড়ায় হোক এমন ভাব সর্বত্রই প্রতিনিবৃত্ত হয়ে এসেছে ।।।







শুনেছি পৃথিবীতে আবেগ অনুভূতি আছে বলেই সভ্যতা টিকে আছে সমাজ দাড়িয়ে আছে ।
আবেগ এমন এক প্রক্রিয়া যা না থাকলে কাউকে মানুষ হিসেবে গন্য করা যায় না, আর কম থাকলেও ক্ষতি কিংবা বেশী থাকলে আরো বেশী ক্ষতি । যার চাক্ষুস সাক্ষী এই আমি....!!!!

আমার মাঝে এত আবেগ কোথেকে এল আমি জানিনা?? এটা কি আমার জন্য খোদা প্রদত্ত এক অমুল্য উপঢৌকন নাকি বিপরীত কিছু!!! কারণ আমি দেখেছি, উপলদ্ধি করেছি যে এই অতিরিক্ত আবেগের কারণে অন্যের কাছে যতটুকুন না সমাদৃত হয়েছি তার চেয়েও বেশী ব্যবহূত হয়েছি । ভাবতেও একটু অবাক লাগছে খারাপ ও লাগছে কিছুটা !!!
তবে মহান হওয়ার কল্পে আমি বলি কি-- সৃষ্টি সুখের উল্লাসে নিজকে বিলিয়ে দিতে পেরে আমি ধন্য ।।।।।।।।।

কিন্তু আর কতদিন এভাবে চলবে??
আর তো চলতে দেয়া যায়না, আমাকে আমার দিকে তাকিয়ে হলেও শক্ত হতে হবে । কারণ আমি যে আমাকে ভালবাসি...!!!!







আচ্ছা ভালবাসার কথা যখন এসেই পড়ল তবে কিছুক্ষন চালিয়ে নেয়া যাক ভালবাসা..........

এখানে ভালবাসার নিগূঢ় রহস্য উদঘাটন কিংবা বিজ্ঞজনের বিজ্ঞ মতামত লক্ষ্য করা যেতে পারে......

ভালবাসার অর্থ ভালো-বাসা নাকি ভালবাসা, নাকি ভালোর মাঝে বসবাস করা নাকি বসবাসের স্থানকে ভালো রাখা.....!!!!
যে কোনটিই হতে পারে!!!
তবে কোন এক স্থলে শুনেছিলাম

ভালোবাসা নাকি প্রবল বৃষ্টিতে এক ছাতার নীচে দুইজনের অবস্থান, যেখানে উভয়েরই চেষ্টা থাকবে কিভাবে অপরজনকে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করা যায়, ফলে বৃষ্টি শেষে দেখা যায় উভয়ের শরীরই একটু একটু ভিজে আছে এবং একটু একটু শুকনো আছে ।।।।।।
তবে আমার কাছে ভালোবাসা হল
.
.
.
.
.
.
.


তবে যাই বলি না কেন, এই চারটে অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত শব্দের কারণেই.........


এই বিশাল সৃষ্টি টিকে আছে,
আমি এখানে এসে লিখছি,
আপনি তা এসে পড়ছেন,
অতঃপর আমায় ধন্য ধন্য করে চলে যাচ্ছেন ।।।।।।



এহেন প্যাঁচালী কথাকথন এক নিঃশ্বাসে পাঠ করিয়া শেষ করিবার জন্য আপনাকে অত্যাধিক ধন্যবাদে ভূষিত করা গেলো ।

No comments:

Post a Comment

সর্বাধিক দেখা পোস্ট